
হোমিওপ্যাথি দিয়েছি বলে অ্যালোপ্যাথি বন্ধ করিনি। অ্যালোপ্যাথি কিন্তু পকেটে আছে। জলদস্যুদের উদ্দেশে এমন মন্তব্য করেছেন এলিট ফোর্স র্যাব এর মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
র্যাব ডিজি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম দস্যুপনা ছেড়ে সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন। এরপরেও দেখেছি কিছুদিন আগে বেশকয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। দস্যুরা মনে করছেন র্যাব যে বয়ান দিয়ে গেছে শুনলাম, এরপর চলে আসলাম, কাল থেকে শেষ।
তাদেরকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছি, আমরা কিন্তু সেই জায়গা থেকে বলিনি। আমরা যেটা বলি সেটা কিন্তু করি। আপনারা দস্যুপনা করবেন না। করলেই কিন্তু বিপদ আছে। আমরা হোমিওপ্যাথি দিয়েছি বলে অ্যালোপ্যাথি বন্ধ করিনি। অ্যালোপ্যাথি কিন্তু পকেটে আছে। যেখানে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমরা কিন্তু সেই ব্যবস্থা নেব।
এখনো যারা এ পথে আছেন তারা সৎপথে চলে আসেন। আমাদের যদি সাহায্য লাগে আমরা সাহায্য দিতে প্রস্তুত। কিন্তু ওই পথে থেকে জীবন নির্বাহ করে সাধারণ জেলেদের সাগরে নামা বন্ধ করে দেবেন, এটা আমরা হতে দেব না বলে জানান র্যাব ডিজি।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে বরগুনার পাথরঘাটা লঞ্চঘাট পরিদর্শনকালে র্যাব মহাপরিচালক এসব কথা বলেন।
সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হওয়ার পর যারা বরিশাল সমুদ্র উপকূলে দস্যুপনা করছেন তাদের কঠোর বার্তা দিয়ে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে সুন্দরবন জলদস্যু ও বনদস্যু মুক্ত করা হয়েছে। এরপরেও দুই একজন দস্যু চেষ্টা করেছে তাদের কর্মকাণ্ড চালাতে। কিন্তু আমরা তাদেরকে আইনগতভাবে দৃঢ়হস্তে কঠোরভাবে মোকাবেলা করেছি। যেসব ডাকাত-দস্যুরা আত্মসমর্পণ করেছে, গত মাসেও আমরা তাদেরকে ঘর দিয়েছি, দোকান দিয়েছি, গরু ও জালসহ নৌকা দিয়েছি। সবই করেছি আমাদের অর্থায়নে। সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে এসব করেছি। কারণ, তারা যাতে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আসতে পারে।
র্যাব ডিজি বলেন, যারা এখনো আত্মসমর্পণ করেনি তাদেরকে বলছি, দস্যুপনা সম্মানজনক কাজ না। কারণ একজন দস্যুর সন্তান স্কুলে গিয়ে বলতে পারে না তার বাবা কী করে। আমার বাবা অমুক ডাকাতে সর্দার। সেই বাচ্চা লজ্জিত হয়। এই লজ্জা না, আমরা চাই দস্যুরা সম্মানের সঙ্গে, গর্বের সঙ্গে ব্যবসা করবে মাথা উঁচু করে বাঁচবে। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা দস্যুপনা থেকে সরে আসেন। আমরা চেষ্টা করছি আর্থিকভাবে সহায়তা করা ও মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, ওই নির্দেশনার আলোকে সবাই যাতে সৎ পথে আসেন, সৎভাবে ব্যবসা করেন। দরকার নেই ডাকাতি করে নদীর মধ্যে বসবাস করে জীবনযাপন করার।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করেছি, সাগরও নিয়ন্ত্রণে আছে। সাগরের দস্যুপনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনবো। এটা নিয়ে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। মুষ্টিমেয় কয়েকজনের কারণে এখানে একটা অস্থির পরিবেশ বিরাজ করবে এটা কিন্তু আমরা হতে দেব না। আমরা আবারো আহ্বান জানাচ্ছি, দস্যুপনা বন্ধ করুন। যদি না আসেন আমরা যা ব্যবস্থা নেয়ার নেব। আশা করব, সমুদ্রে যারা দস্যুপনা করছেন তারা আমাদের আহ্বান শুনবেন, আমরা আপনাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে আসতে সহযোগিতা করব।
এলিট ফোর্স প্রধান বলেন, এমন একটা সময় আসবে চুরি-ডাকাতি আর করতে হবে না। সবার ঘরেই গাড়ি থাকবে। এমন একটা লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। আমরা এখন উন্নয়নের মহাসড়কে আছি, এভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এসময় কেউ যদি দুর্বৃত্তপনা করে, দেশের উন্নয়নকে ব্যাহৃত করতে চাই তাদেরকে কিন্তু ছাড় দেওয়া হবে না।
জেলে ও মৎস ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে র্যাব প্রধান বলেন, আমরা সবাই মিলে আপনাদের সঙ্গে আছি। পাশে দাঁড়িয়েছি। আপনারা নিশ্চিন্তে মৎস আহরণ করুন, আমরা আগামী দিনেও আপনাদের পাশে থাকবো।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ডিজি বলেন, র্যাব আইন অনুযায়ী কাজ করে। র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই। র্যাব কখনোই মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজ করেনি। সংস্থাটি সবসময় আইন এবং বিধিবদ্ধভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। কোনো অপরাধী অপরাধ করলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে তাকে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি অনেককে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।
আর যে মানবাধিকারের কথা বলা হচ্ছে, তা কিভাবে সংঘটিত হয়েছে? তা আমার জানা নেই। তবে এতটুকুই বলবো কে, কি কারণে এবং কোন উদ্দেশ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে? এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তীতে জানানো হবে জানান র্যাবের এই মহাপরিচালক।