
করোনাভাইরাস মহামারি এবং নতুন আতঙ্ক ওমিক্রন ভয় নিয়েই পালিত হবে এবারের বড়দিন। স্থাস্থ্যবিধি মেনে এবার সীমিত পরিসরে হবে খৃষ্টধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব। তবে বেশিরভাগ দেশেই ঘরোয়া আয়োজনে চলছে বড়দিনের প্রস্তুতি।
সপ্তাহ-দুয়েক পরে আসছে ২৫ ডিসেম্বর, সেই ইপ্সিত দিন। তবে এ বছরেও বিশ্বের অন্যান্য ধর্মের উৎসবগুলোর মত করোনাভাইরাস মেরি ক্রিসমাসের চিরাচরিত প্রথাকে ভেঙে নতুন আরেকটি রুপ দিতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই পোপ ঘোষণা দিয়েছেন এবাবের বড়দিন অনুষ্ঠিত হবে ভার্চুয়ালি।
করোনার বিধিনিষেধ মেনেই বিশ্বের অনেক জায়গায় পুরোদমেই চলছে ক্রিসমাসের প্রস্তুতি। অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিসমাস-ট্রির খামারগুলোতে ভিড় করছেন হাজার হাজার মানুষ। খামার মালিকরা বলছেন, বিশ বছরের মধ্যে গত দুই বছরেই সবচেয়ে বেশি ক্রিসমাস-ট্রি বিক্রি হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার উইলি’স ক্রিসমাস-ট্রি খামার মালিক উইলিয়াম চ্যাপেলো জানান, ২আশা করছি আমাদের ৪০টি বাগানের সব কয়টি গাছ ২৩ ডিসেম্বরের আগেই শেষ হয়ে যাবে।
অপরদিকে, খৃষ্টের জন্মস্থান বেথেলহেমের চার্চ অব নেটিভিটিতে উন্মুক্ত হয়েছে সুবিশাল ক্রিসমাস-ট্রি। সোনালি আর সাদা আলোয় এর মাথায় শোভা পাচ্ছে উজ্জ্বল তারকা। তবে সেখানেও থাকছে না চিরাচরিত কোলাহল।
যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানিসহ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে চলছে করোনা বিধিনিষেধ। তাই অনেকটাই মলিন হয়ে পড়েছে বড়দিনের প্রস্তুতি। তাই স্বল্প পরিসরে উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা করেছেন খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা। সাজিয়েছেন ক্রিসমাস ট্রি, বাড়ির আঙিনাজুড়ে রাখা হয়েছে আলোকসজ্জা।
অন্যান্য বছর এ সময় ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে লাগে উৎসবের রং। ক্রিসমাস ট্রি আর ঝলমলে আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে শহরগুলো। তবে এবারের চিত্র একেবারেই আলাদা। গত বছরের মতো এবারো করোনা মহামারীতে অনেকটাই ফিকে বড়দিনের আনন্দ।
ধর্মীয় এ উৎসব সামনে রেখে বিধিনিষেধ জোরদার করেছে যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানিসহ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ। ঘরের বাইরে জনসমাগম নিষিদ্ধের পাশাপাশি বড়দিনের আয়োজনেও সীমা টেনেছে অনেক দেশ। সীমিত পরিসরে হলেও সাজানো হয়েছে ক্রিস্টমাস ট্রি ও গীর্জা। বর্নিল আলোকসজ্জা ও কেনা-কাটায় দিনটি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা।এরই মধ্যে রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও দর্শনীয় স্থান রঙিন আলোয় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। তবে করোনা মহামারিতে বাড়তি সতর্কতা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
স্পেনের নাগরিক মন্টসে গর্ডিয়া জানান, কর্মসূত্রে দূরে থাকলেও বড়দিন সবসময় বাড়িতেই কাটিয়েছি। এইপ্রথম বাড়িতে যাবো না। বড়দিনের উৎসব, আয়োজন, কেনাকাটা সবকিছুই খুব মিস করছি।
ক্রোয়েশিয়ার জাগ্রেবের আলোকসজ্জা বলে দেয় বড়দিন এসে গেছে। রাস্তাঘাট, পার্ক, দোকানপাট ও বিভিন্ন প্যাভিলিয়নে উৎসবের আমেজ। তবে মহামারীর কারণে আগে মতো উপচে পড়া ভিড় নেই। সংক্রমণ ঠেকাতে ভ্রমণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে বিধিনিষেধ। মহামারির মধ্যেই বড়দিন উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইতালীয়রাও। নানা ধরনের উপহারের পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানগুলো।
বড়দিন ও নতুন বছরের বর্ণিল সাজে তুষার শুভ্র রাশিয়ার মস্কোর নিকোলস্কায়া হয়ে উঠেছে অপরূপা। সেন্ট্রাল স্কয়ারের পাশাপাশি মানেঝনায়া স্কয়ারে ঐতিহ্যবাহী ক্রিস্টমাস মেলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তবে করোনার ঝুঁকি নিয়ে কতটা উপভোগ করা যাবে তা নিয়ে সন্দিহান রুশরা।
একজন বলেন, এখনো বুঝতে পারছি না এ বছর উৎসবে অংশ নেব কি না। পরিবারকে সময় দিতে শহরের বাইরে থাকবো। তাই এখনো নিশ্চিত না।
বিধিনিষেধ শিথিল করায় দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে বেলজিয়ামে। ব্রাসেলসে ক্রিস্টমাস ট্রিসহ বিভিন্ন জায়গায় বড়দিনের সাজসজ্জা করা হয়েছে। তবে করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
করোনায় জার্মানিতে বড়দিনের উৎসবে ভাটা পড়েছে, বিগত এক বছরে ইউরোপের এই দেশটি করোনার অন্যত শিকারে পরিনত হয়েছে। এ বছর তাই বেশিরভাগ শহরেই ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন আয়োজন বাতিল করা হয়েছে।
বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে হংকংয়ের রাস্তাগুলো। ছুটির আমেজে ভাসছেন পুরো হংকংবাসী।পাল তোলা আলোকিত নৌকা যেন প্রবাহমান দ্বীপের মতো। হোটেলগুলোর অভ্যর্থনা কক্ষ থেকে শুরু করে, লবি, রেঁস্তোরা, পিলারসহ সব জায়গাতেই লাইট, বল আর গিফটের সমন্বয়ে বড়দিনকে আমন্ত্রণ জানানোর অপেক্ষা।
পিছিয়ে নেই জাপানের টোকিও শহরও। ডিস্কো বল আর ফেস্টুনের মতো নানান সজ্জার আকর্ষণে নগরী পেয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা।পানির ফোয়ারার সামনে বাচ্চাদের খেলাধুলা অথবা সাদা আলোয় সাজানো রাস্তার ধারে সারিবদ্ধ গাছ, কুকুরের গলায় ফ্ল্যাশিং আলোর জমকালো লাইট শো কিংবা শপিং মলের বাইরে বড় পর্দায় হ্যারি পটারের প্রর্দশনী -এই সব কিছুই যেন জাপানীদের বড়দিন আয়োজনের অংশ। উপহার কেনা, টোকিও মল ঘুরে দেখা, মাটি থেকে ধোঁয়া ওঠার দৃশ্য -এমন সব মুহূর্তগুলোকে মুঠোফোনে ধরে রাখার মাধ্যমেই বছরের শেষে ছুটির আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন যে যার মতো।
এছাড়াও বড়দিনের উষ্ণ ছোঁয়া লেগেছে চেক রিপাবলিকের রাজধানী প্রাগেও। বর্ণিল আলোয় সেজেছে পুরো শহর।