বেত্রাবতী ডেস্ক-ভয়াবহ আর্থিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা। বিক্ষোভ-সংঘাতে চরম চাপের মুখে রয়েছেন দেশটির শীর্ষ নেতারা। জনক্ষোভের মুখে গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন মাহিন্দা রাজাপাকসে। তারপর থেকেই মূলত সংকট আরও তীব্র হতে শুরু করে। ৭০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে এই দ্বীপরাষ্ট্র।
ওষুধ, রান্নার গ্যাস, জ্বালানি এবং খাদ্যসহ মৌলিক জিনিসের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে কারফিউ জারি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজাপাকসে পরিবারের সদস্যরা কে কোথায় আছেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে তাদের অবস্থান সম্পর্কে কিছুটা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
মাহিন্দা রাজাপাকসে
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে। দেশটির এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী গৃহযুদ্ধে জয়লাভের জন্য অনেকের কাছে বীর হিসেবে সমাদৃত হলেও এখন ভিলেনের তালিকা রয়েছেন। পূর্বসূরিরা ব্যর্থ হলেও শ্রীলঙ্কার তামিল টাইগার বিদ্রোহীদের (এলটিটিই) সঙ্গে প্রায় ৩০ বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শ্রীলঙ্কার মানুষের কাছে নায়ক হয়ে ওঠেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। ২০০৯ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি তাদের পরাজিত করেন। যুদ্ধের পরপরই বিজয় কুচকাওয়াজ ও জনসাধারণের এক অনুষ্ঠানে তাকে সিংহল বৌদ্ধ রাজাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তিনি ছিলেন স্বাধীনতা-পরবর্তী শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে জনপ্রিয় সিংহল বৌদ্ধ নেতা।
এমনকি কেউ কেউ তাকে সম্রাট মাহিন্দা বলেও প্রশংসা করেন। তিনি শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার অধীনে শ্রমমন্ত্রী এবং মৎস্য ও পানিজসম্পদমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ২০০৪ সালের এপ্রিলে সাধারণ নির্বাচনের পর মাহিন্দাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর থেকেই ক্ষমতার আসন পাকাপোক্ত করেন মাহিন্দা। ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকাকালে মাহিন্দা তার অবস্থানকে আরও সুসংহত করেছেন। সংবিধান পরিবর্তন করে তাকে তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া হয়। তার তিন ভাইকে প্রভাবশালী পদে বসানো হয়।
মাহিন্দা রাজাপাকসে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এতদিন তার সব ভাই একত্রে কাজ করে আসলেও দেশের অর্থনীতিতে যখন টালমাটাল অবস্থা তখন দেখা দেয় ভাঙনের সুর। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানান। আর এই পদত্যাগের মধ্য দিয়েই হয়তো তার রাজনৈতিক জীবনের অবসান ঘটলো। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি নৌঘাঁটিতে তিনি অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
গোতাবায়া রাজাপাকসে
তীব্র চাপের মুখে মঙ্গলবার মধ্যরাতে দেশ ছেড়ে মালদ্বীপে আশ্রয় নেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসে। বুধবার শেষের দিকে মালদ্বীপ থেকে তার সিঙ্গাপুরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের নির্ধারিত ফ্লাইটের পরিবর্তে তিনি এখন ব্যক্তিগত বিমানে (প্রাইভেট জেট) সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যেই ওই ব্যক্তিগত বিমানটি মালদ্বীপে পৌঁছেছে। যে কোনো সময় তিনি সিঙ্গাপুরে পৌঁছে যাবেন। এদিকে বুধবারই তার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা ছিল। দেশটির স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনেও এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।
কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেও গোতাবায়ার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া হয়নি। বুধবার স্পিকার জানিয়েছিলেন যে, পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট আজই পদত্যাগপত্র হস্তান্তর করবেন। প্রেসিডেন্ট নিজেই তাকে এ কথা জানিয়েছেন। দেশত্যাগের আগে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দিয়ে গেছেন গোতাবায়া রাজাপাকসে।
নামাল রাজাপাকসে
মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে ও সাবেক ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন নামাল রাজাপাকসে। দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তার ওপর। তবে নামাল রাজাপাকসে দেশ ছাড়ার কোনো চেষ্টাও করেননি। তিনি এখন কলম্বোতে তার নিজ বাসভবনেই অবস্থান করছেন।
বাসিল রাজাপক্ষে
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের ভাই বাসিল রাজাপাকসে দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী ছিলেন। সম্প্রতি তিনি দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে অভিবাসন কর্মকর্তারা বাধা দেন। শ্রীলঙ্কা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন মঙ্গলবার জানায়, তাদের সদস্যরা কলম্বো বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বাসিল রাজাপাকসেকে দেশত্যাগে বাধা দিয়েছেন। বাসিল রাজাপাকসে বিমানবন্দরে প্রবেশ করার পর স্থানীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে তার ছবি ব্যাপক হারে প্রকাশ করা হয়। এতে তার দেশ ত্যাগের খবরে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তিনি জনক্ষোভের মুখে বিমানবন্দর থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। তবে তিনি দেশ ছাড়েননি এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তিনি কলম্বোর কোনো একটি স্থানে আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে।