আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার ইবাদতের জন্য পশু জবাই করাই কোরবানি। কোরবানির জন্য নির্ধারিত তিনদিন নির্ধারিত পশু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জবাই করা।
ইসলামি শরিয়তে কোরবানি ইবাদত হিসেবে প্রসিদ্ধ, যা কোরআন-সুন্নাহ এবং মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্য দ্বারা প্রমাণিত। কোরবানির নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন-
১. فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
‘অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্য নামাজ পড় এবং কোরবানি কর।(সুরা কাউসার : আয়াত ২)
২. قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, অবশ্যই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৬২)
কোরবানির নির্ধারিত দিন
হিজরি ১১তম মাস তথা হজের মাস জিলহজের ১০ তারিখ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন পুরুষ ও নারীর কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ৭ ভরি/তোলা সোনা অথবা সাড়ে ৫২ ভরি/তোলা রুপা বা এর সমপরিমাণ সম্পদ থাকলে নির্ধারিত এ দিনে কোরবানি করা ওয়াজিব।
টাকা-পয়সা, সোনা-রুপার অলঙ্কার, ব্যবসায়িক পণ্য, প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি, শৌখিন বা অপ্রয়োজনী আসবাবপত্র এসব কিছুর মূল্য কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
কোরবানির জন্য যেসব পশু শর্ত
কোরবানি করার জন্য নির্দিষ্ট পশু রয়েছে। তবে এসব পশুর বয়স এবং এক পশুতে কয়জন অংশগ্রহণ করতে পারবে এ সম্পর্কে ইসলামের অনেক দিকনির্দেশনাও রয়েছে। আর তাহলো-
কোরবানির পশু
ইসলামি শরিয়ত যেসব পশু নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা দিয়ে কোরবানি দিতে হবে। তাহলো ৬টি- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। কোরআনের ভাষায় এগুলোকে ‘বাহিমাতুল আনআম বলা হয়।’
কোরবানির পশু সম্পর্কে নবিজীর দিকনির্দেশনা
১. হাদিসে এসেছে- ‘তোমরা অবশ্যই নির্দিষ্ট বয়সের পশু কোরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কোরবানি করতে পার।’
২. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোনো জন্তু কোরবানি করেননি ও কোরবানি করতে বলেননি। তাই কোরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে।
৩. ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, কোরবানির জন্য সর্বোত্তম জন্তু হল শিংওয়ালা সাদা-কালো দুম্বা। কারণ নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরনের দুম্বা কোরবানি করেছেন বলে বুখারি ও মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে।
কোরবানির পশুতে ভাগ
উট, গরু ও মহিষ এ তিন পশু সাত ভাগে কোরবানি দেয়া যায়। হাদিসে এসেছে- ‘আমরা হুদাইবিয়াতে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তখন আমরা উট ও গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কোরবানি দিয়েছি।’
কোরবানির পশুর বয়স
ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা খুবই জরুরি। কোরবানির পশু পরিপূর্ণ বয়সের হতে হবে। তাহলো এমন-
১. উট : কমপক্ষে পাঁচ বছর বয়সী হতে হবে।
২. গরু/মহিষ : কমপক্ষে দুই বছর বয়সী হতে হবে।
৩. ছাগল/ভেড়া/দুম্বা : এক বছর বয়সী হতে হবে।
কোরবানির পশু দোষ-ত্রুটিমুক্ত হওয়া
কোরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন- চার ধরনের পশু; যা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে না। (তাহলো)-
১. অন্ধ; যার অন্ধত্ব স্পষ্ট।
২. রোগাক্রান্ত; যার রোগ স্পষ্ট।
৩. পঙ্গু ; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং
৪. আহত, যার কোনো অঙ্গ ভেঙ্গে গেছে। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ নাসাঈর এক বর্ণনা ‘আহত’ শব্দের স্থলে ‘পাগল’ উল্লেখ আছে।
তবে কোরবানির জন্য গুণগত দিক থেকে উত্তম হলো- কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট, অধিক গোশত সম্পন্ন, নিখুঁত, দেখতে সুন্দর হওয়া।
পূর্ণ মালিকানা থাকা
কোরবানিদাতা যে পশুটি কোরবানি করবেন, তার উপর কোরবানিদাতার পরিপূর্ণ মালিকানাসত্ত্ব থাকতে হবে। যদি এ পশু বন্ধকের পশু, কর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু হয় তবে তা দ্বারা কোরবানি আদায় হবে না।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ইসলামি শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত পশু নির্ধারিত দিনগুলোতে আল্লারহ সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি করা। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে কোরবানি করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সঠিক পদ্ধতিতে উত্তম পশুর দ্বারা কোরবানির করার তাওফিক দান করুন। কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।