মিজানুর রহমান মিনু কাজিপুর সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি।।ইট-পাথর আর যান্ত্রিকতার যুগে যমুনা নদীর চরাঞ্চলে একমাত্র বাহন হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি।
ধু-ধু বালুচর পাড়ি দিয়ে দুর্গম চরে ঘোড়ার গাড়ির মাধ্যমে আনানেওয়া করা হচ্ছে মালামাল। শুধু তাই নয়, নদীর হাঁটু ও গলা পানি সাঁতরিয়ে কূলে উঠছে মালবাহী ঘোড়ার গাড়ি।
সিরাজগঞ্জের সদর, কাজিপুর, বেলকুচি ও চৌহালী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীতে ছোট বড় অসংখ্য চর জেগে ওঠায় নৌ চলাচল প্রায় বন্ধ।
এ কারণে পণ্য পরিবহণে ঘোড়ার গাড়ি আর যাত্রী বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল। চরাঞ্চলে নির্দিষ্ট সড়ক না থাকায় বালুপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে বেগ পোহাতে হচ্ছে গাড়ির চালক দের। যমুনাবিধৌত চৌহালী উপজেলার ৭টি, বেলকুচির ৪টি, সদরের ২টি ও কাজিপুরের ৮টি ইউনিয়নই নদীবেষ্টিত।
কৃষিনির্ভর এসব ইউনিয়নের মানুষদের জমির ফসল বাজারজাত কিংবা সংরক্ষণ করতে নিতে হয় চরাঞ্চল থেকে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের হাটবাজারে।
শুষ্ক মৌসুমে বালু বা হাঁটুপানির পথে এসব পণ্য পরিবহণ করতে হয় ঘোড়ার গাড়িতে। আর বর্ষায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা।
বর্তমানে যমুনা নদীতে অসংখ্য ছোটবড় চর জেগে ওঠায় নৌচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে চরাঞ্চলে যাত্রী পরিবহণে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল ও ঘোড়ার গাড়ির সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চরাঞ্চলে এখন অনেকেই ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ঘুশুরিয়া, পয়লা, হাটাইল, হিজুলিয়া ও কাঁঠালিয়া চরে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন নছের আলী, আলামিন, ইউসুফ ও ইয়াসিন আলীসহ আরও অনেকেই। নছের আলী প্রায় ২০ বছর ধরে ঘোড়ার গাড়ি চালান।
বর্তমানে তার দুটি ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে। একটি সে নিজে এবং অন্যটি তার ছেলে আলামিন শেখ চালিয়ে দৈনিক ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা আয় করেন।
অপরদিকে ঘোড়ার খাবারের জন্য প্রতিদিন ব্যয় করতে হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বাকি টাকায় চলে তাদের সংসার।
নছের আলী ও তার ছেলে আলামিন বলেন, শুষ্ক মৌসুমে চরাঞ্চলে উৎপাদিত সব ফসল ঘোড়ার গাড়িতে পরিবহণ করতে হয়। আগে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ঘুশুরিয়া চরে দু-একটা গাড়ি ছিল। আর এখন ১৫-২০টা ঘোড়ার গাড়ি হয়েছে। দিনদিন ঘোড়ার গাড়ির চাহিদা বাড়ছে।
এছাড়া একই চরে ভাড়ায়চালিত মোটর সাইকেল চালক সাদ্দাম হোসেন জানান, চরাঞ্চলে যাতায়াতে এখন ভাড়ায়চালিত মোটর সাইকেলের চাহিদাও বাড়ছে। বালুচর হওয়ায় যাতায়াতে একটু বেশি সময় লাগে তারপরও সারাদিন মোটামুটি তেল খরচ বাদে ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা আয় হয়।
এ প্রসঙ্গে চৌহালী উপজেলার ৭নং বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, যমুনা নদীতে চর জেগে ওঠায় নৌচলাচল বন্ধ। এ কারণে চরাঞ্চলে যাতায়াতের সুবিধার্থে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল ও পণ্য পরিবহণে ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার বেড়ে গেছে।
অনেকেই কৃষি ও মৎস্য শিকারের পেশা ছেড়ে দিয়ে ঘোড়ার গাড়ি ও মোটর সাইকেল কিনে ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।