তিন দফা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপর্যয় ঘটেছে। বিশেষ করে প্রথম এবং দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে আওয়ামী লীগের ৪২৪ জন প্রার্থী পরাজিত হয়েছে। অর্থাৎ ৪২% প্রার্থী পরাজিত হয়েছে এই নির্বাচনে।
অন্যদিকে, ১৩১টি চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দ্বিতীয় হতে পারেনি। তিন দফা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এসব বিদ্রোহী প্রার্থীরা সবই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত। মনোনয়ন না পেয়ে দলের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে তারা শুধু প্রার্থী হয়নি তারা আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করে বিজয়ী হয়েছে। আর এ সমস্ত কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য একটি অশনি সংকেত বলে চিহ্নিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকের নির্বাচনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যন্ত যে সাংগঠনিক ভিত্তি সুদৃঢ় করতে চেয়েছিলো তা উল্টো ফল দিয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই এই অবস্থা হয়েছে। আর এই কোন্দল যে শুধুমাত্র তৃণমূলের কোন্দল এমনটি নয়। এই কোন্দলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পর্যন্ত জড়িয়ে আছে বলেই আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন। আর প্রথম ধাপের নির্বাচনের পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে বারবার বিদ্রোহীদের প্রার্থী না হওয়ার জন্য অনুরোধ, শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি এবং কোথাও কোথাও শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনার পরও বিদ্রোহ দমেনি, বরং এখন দেখা যাচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্থীরাই বেশি দাপটে নির্বাচন করছে।
পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থীরা কেবল প্রার্থী হয়েই থাকছে না, তারা সহিংস হয়ে উঠছে এবং এই সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৪০ জন প্রাণ হারিয়েছে। আর এই বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং এই ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানা গিয়েছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আগামী ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ঐ বৈঠকে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফল বিপর্যয় নিয়ে ছুলছেরা বিশ্লেষণ করা হবে এবং এই ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থা গ্রহণ করবেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি বার বার বলেছেন, নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে যারা প্রার্থী হবে তাদের আজীবন নিষিদ্ধ করা হবে। এমনকি তাদেরকে যারা মদদ দিয়েছেন তাদেরকেও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির এই বক্তব্যের পরও বাস্তবে তেমনটি ঘটেনি। বরং দেখা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে প্রকাশ্যেই বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় এমপিরা মদদ দিয়েছেন। আর এটির ফলেই আওয়ামী লীগ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন, যা দলের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে পুরো কৌশলটিই ছিল ভুল।
প্রথম ভুল ছিলো, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা সমীচীন নয়, করা উচিৎও হয়নি। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগকে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। দ্বিতীয়ত, মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে যে বিচার-বিশ্লেষণ সেখানে অনেক ত্রুটি ছিল। তৃণমূল থেকে যে নামগুলো এসেছিল সে নামগুলোর মাঝেও অনেক সমস্যা ছিল।
যার ফলে স্থানীয় পর্যায়ে তৃণমূলের জনপ্রিয় নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। আর তৃতীয়ত, আওয়ামী লীগের এমপি এবং প্রভাবশালী নেতাদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। আর এই সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে আওয়ামী লীগের আসন্ন কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে ছুলছেরা বিশ্লেষণ করা হবে।
যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, এমন তথ্যই জানা গেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে।