
মুহাম্মদ মনসুর আলী, বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
১৯১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের কুড়িপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মো: মনসুর আলী সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন ক্যাপ্টেন ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলহত্যার ফলে নিহত চার জাতীয় নেতার মধ্যে তিনিও একজন।
মনসুর আলীর শিক্ষা জীবন সাফল্যমণ্ডিত। তিনি সিরাজগঞ্জ বি.এল. হাইস্কুলে পড়াশুনা করেছেন৷ পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ১৯৪১ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি বি.এ পাস করে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন।
১৯৪৫ সালে আলীগড় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ এবং ‘ল’ পাস করেন৷ তিনি এল.এল.বি তে প্রথম শ্রেণী লাভ করেন। ১৯৫১ সালে পাবনা জেলা আদালতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। তিনি পাবনা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন।
আলীগড় থেকে দেশে ফেরার পর মনসুর আলী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন৷ ১৯৪৮ সালে তিনি যশোর ক্যান্টনমেন্টে প্রশিক্ষণ নেন এবং পিএলজি এর ক্যাপ্টেন পদে অধিষ্ঠিত হন৷ এ সময় থেকেই তিনি ক্যাপ্টেন মনসুর নামে পরিচিত হতে থাকেন৷
ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে পরিচিত হন৷ ১৯৫১ সালে তিনি আওয়ামী-মুসলিম লীগে যোগ দেন৷ জড়িয়ে পড়েন সক্রিয় রাজনীতিতে৷ দলের পাবনা জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি৷
তিনি ১৯৫৬ সালে বিভিন্ন সময় পূর্ববঙ্গ কোয়ালিশন সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক, খাদ্য ও কৃষি এবং শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন ৷
বাঙালির মুক্তির সনদ ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন৷ ১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচন করেন৷ পাবনা-১ আসন থেকে পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকারে মনসুর আলী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ এর জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিব পাকিস্তানি কারাগার থেকে দেশে ফিরে মন্ত্রী পরিষদ পুনর্গঠন করেন৷ এবার মনসুর আলী প্রথমে যোগাযোগ ও পরে স্বরাষ্ট্র এবং যোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের নির্বাচনে মনসুর আলী পুনরায় পাবনা-১ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ এ বছর তিনি আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি দলের সদস্য নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি চালু করলে এ সময় ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মনসুর আলী মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।
১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৭৫ সালের তিন নভেম্বর মধ্যরাত্রিতে অন্য চার জাতীয় নেতার সাথে তাকে হত্যা করা হয়।