
বাতাসে হিমেল পরশ, আর্দ্রতা সরে গিয়ে শুষ্ক ভাব জানান দিচ্ছে শীত আসছে। কখনও ঠান্ডা, কখনও গরম এই তাপমাত্রার তারতম্যের কারণেই সর্দি-গলাব্যথা খুব সহজেই ধরে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে নাক দিয়ে পনি পড়া, গা-হাত-পায়ে ব্যথা এসব তো আছেই।
এছাড়াও বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনোভাইরাসের প্রকোপ আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তই কারণ ঠান্ডা লাগলে, গলায় সংক্রমণ হলে সবসময় গরম কিছু খাওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
বারে বারে গরম পানি, চা, ভেপার, গার্গল এসব করলে কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ হলে তার কর্মক্ষমতা অনেকখানি নষ্ট হয়ে যায়।
এছাড়াও পায়ের ব্যথা কমাতেও চা খুব উপকারী। তবে অবশ্যই ভেষজ চা। যদি ভেতরে কফ বসে যায়, তা শরীরের পক্ষে খুবই খারাপ। ভেষজ চা খেলে সেই কফ খানিক নরম হয়ে কাশির সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসে। ভেষজ চায়ের আরো কিছু উপকারিতা আছে।
আদা, মধু, দারচিনি, গোলমরিচ ইত্যাদি উপাদান থাকায় তা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। রসুন, আদায় যে অ্যারোমা থাকে তা শ্বাসযন্ত্রকে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখে। সেই সঙ্গে সাইনাসের সমস্যা যাঁদের আছে তাঁদের জন্য খুবই উপকারী।
এই সব উপাদানে ভরপুর গরম পানীয় বারেবারে খেলে কফ নরম হয়। গলা খুশখুশানি কমে। এমনকী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
বাড়িতেই তৈরি করুন হার্বাল চা। দোকানের তুলসী চায়ের থেকে তা অনেক বেশি পুষ্টিতে ভরপুর। এছাড়াও বাচ্চা থেকে বয়স্ক সবাই বারে বারে খান এই চা। প্রত্যেক মানুষের দেহেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করা খুবই জরুরি।
তুলসী চা
তুলসী পাতার এমনিই অনেক গুণ। ঠান্ডা লাগলে সেই প্রাচীন কাল থেকেই তুলসী পাতা আর মধু চিবিয়ে খেতে বলা হত। এছাড়াও তুলসী পাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ঠাসা। বিশেষ করে লাল তুলসী। তাই সকালে উঠে এমনিই তুলসী পাতা চিবিয়ে একগ্লাস ইষদুষ্ণ গরম পানি খান। অথবা চায়ের পানি গরম হলে চা পাতা দিন। সেই সঙ্গে পাঁচটা তুলসী পাতা ফেলে দিন। দুকাপ চা হলে পাঁচটা পাতা দেবেন।
লবঙ্গ চা
২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের জন্য লবঙ্গ চা খুবই উপকারী। প্রথমে পরিমাণ মতো লবঙ্গ নিয়ে বেঁটে নিতে হবে। তারপর সেই লবঙ্গের গুঁড়ো এক কাপ পানিতে মিশিয়ে কম করে ৫-১০ মিনিট ফোটাতে হবে। যখন দেখবেন পানিটা ফুটতে শুরু করেছে, তখন তাতে হাফ চামচ চা পাতা ফেলে দেবেন। আর কিছু সময় অপেক্ষা করে পানিটা ছেঁকে নিলেই ব্যাস লবঙ্গ টি রেডি। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন দুবার করে লবঙ্গ চা খাওয়া শুরু করেল শরীরে প্রবেশ ঘটতে শুরু করে ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন কে, ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্য়াঙ্গানিজসহ আরো একাধিক উপকারি উপাদান, যা নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে।
দারচিনি, মধু, গোলমরিচের চা
ইমিউনিটি বাড়াতে এই সবকটি উপাদানই খুব ভালো। এই সবকটিই অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদানে ভরপুর। দারচিনির মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে গোলমরিচ। এছাড়াও থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি। দারচিনি আর গোলমরিচ দিয়ে চা বানিয়ে নিন। খায়ার আগে ওর সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালে এই চা খেলে ওজনও কমবে। ডায়াবিটিস থাকবে নিয়ন্ত্রণে। আর ঠান্ডা লাগার প্রকোপ থেকেও রক্ষা পাবেন।
আদা-লেবুর চা
আদার মধ্যে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর লেবুর মধ্যে ভিটামিন সি। আদা দিয়ে পানি ফুটিয়ে তার মধ্যে গ্রিন টি দিয়ে কিছুক্ষণ ঢাকা দিয়ে রাখুন। চা ছাঁকার আগে গ্লাসে লেবুর রস চিপে দিন। এবার চা ঢেলে খেয়ে নিন। চিনি একদম দেবেন না। পরিবর্তে মধু ব্যবহার করতে পারেন। আর এই চা বানানোর ২০ মিনিটের মধ্যে খেতে হবে। সকালে অথবা বিকেলে খেতে পারেন এই চা।
পুদিনা পাতা ও আদার চা
সুগন্ধের জন্য পুদিনা বিখ্যাত। কাবাব, চাটনি, মশলায় ব্যবহার করা হয় পুদিনা পাতা। বিভিন্ন দেশে পুদিনার বেশি ব্যবহার হচ্ছে তেল তৈরিতে। পুদিনার গাছ থেকে পাওয়া এ তেলের নাম পিপারমেন্ট অয়েল। এ তেল বেশ মূল্যবান। বিভিন্ন শিল্প বিশেষ করে ওষুধ, টুথপেস্ট, মিন্ট চকোলেট, ক্যান্ডি, চুইয়িংগাম ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এসবে এটি ব্যবহার হয়। পুদিনার মধ্যে থাকা মেন্থল কুবই উপকারী। তাই লিকার চায়ের মধ্যে পুদিনা পাতা মিশিয়ে খানিকক্ষণ ঢেকে রেখে খান। ভালো উপকার পাবেন। তার আগে অবশ্য আদা দিয়ে ফুটিয়ে নেবেন।
অপরাজিতা ফুলের চা
অন্যান্য চায়ের তুলনায় অপরাজিতা চায়ের ভেষজ গুণ অনেক বেশি। এই চা রোগপ্রতিরোধ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ঠান্ডালাগা, সর্দি-কাশির উপশম ঘটায়। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে সকালের শুরুটা এককাপ অপরাজিতার চা দিয়ে করতে পারলে ভালো। অ্যান্টি অক্সিডেন্টের গুণে ভরপুর অপরাজিতার চা শরীরে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে। নীল অপরাজিতা খুব ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর কাঁচের জারে ভরে রাখুন। চা বানানোর সময় পানি হাফ চামচ ফুলের গুঁড়ো দিন। এরপর চা পাতা দিতে হবে। এলাচ, মধু আর পুদিনাপাতাও দিতে পারেন।
মশলা চা
অনেকেই দুধ-চিনি সহযোগে চা পছন্দ করেন। চিনির বদলে তালমিছরি ব্যবহার করুন। সেই সঙ্গে দুধে এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি, আদা দিয়ে ভালো করে ফোটান। বিকেলে যদি এই চা খেতে পারেন তাহলে উপকার আছে। তবে দুধ চা কখনই সকালে খাবেন না। এই চায়ের মধ্যে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের জন্য খুবই ভালো। সেই সঙ্গে মাধা ধরা, সর্দি-কাশি ইত্যাদিও কমায়। মন তরতাজা রাখে।