স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা বিশ্বজুড়েই বেড়েছে। অসংক্রামক রোগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো স্ট্রোক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যানুসারে, বিশ্বে দ্বিতীয় প্রধান মৃত্যুর কারণ মস্তিষ্কের এ রোগ।
প্রতিবছর প্রায় এক কোটি ৩৭ লাখেরও বেশি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই মৃত্যুবরণ করেন। বেঁচে থাকা রোগীরা দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ও মানসিক বৈকল্যে ভোগেন।
বাংলাদেশেও স্ট্রোকে আক্রান্তের হার বাড়ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে, দেশে বছরে প্রতি হাজারে ১১ দশমিক ৪ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। সে হিসাবে ১৬ কোটি জনসংখ্যা ধরলে প্রতি বছর স্ট্রোকে আক্রান্ত হন ১৮ লাখ ২৪ হাজারের বেশি মানুষ।
তবে স্ট্রোক হওয়ার আগে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ বাঁধাগ্রস্থ হয়। ফলে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়। যা তাৎক্ষণিকভাবে টের পেলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব। অন্যাথায় রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
স্ট্রোক হওয়ার সময় থেকে শুরু করে হাসপাতালে নেওয়া কিংবা প্রয়োজনীয় ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা পর্যন্ত অনেক সময় লেগে যায়।
এ কারণে স্ট্রোকের আগে মারাত্মক ৬ লক্ষণ প্রকাশ পায়। যা সবারই জানা জরুরি। এই লক্ষণগুলোকে সংক্ষেপে বলা হয় ‘BE FAST’।
বি’ তে ব্যালেন্স বা ভারসাম্য- স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায়ই ভারসাম্য হারানো, মাথা ঘোরা বা মাথা ভারী হওয়ার মতো সমস্যার সম্মুখীন হয়। স্ট্রোক হওয়ার আগে আক্রান্তরা কিছু ধরে রাখতে বা বসে থাকতে পারেন না।
ই’তে আই প্রবলেম বা চোখের সমস্যা- আক্রান্তদের দৃষ্টি কমে যেতে পারে। তখন অনেকেই মনে করেন রোদে হাঁটা বা দিনে পর্যাপ্ত পানি না খাওয়াই এমনটি হচ্ছে। আসলে সেটি হতে পারে স্ট্রোকের আগাম লক্ষণ।
এফ’তে ফেসিয়াল ড্রপিং বা মুখ ঝুলে পড়া- স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখের অর্ধেক (বিশেষ করে মুখের এক পাশের নীচের অর্ধেক) নিচু বা ঝুলে যাওয়ার মতো দেখাবে। কথা বলতে গেলে মনে হবে মুখের একপাশ অসাড় হয়ে পড়েছে।
এ’তে আর্ম উইকনেস বা বাহু দুর্বলতা- একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তি যদিও সমস্যাটিকে এড়িয়ে যান। যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি বেশি দুর্বল হয়ে পড়ছেন কিংবা কোনো কিছু ধরতে অসুবিধা হচ্ছে, ততক্ষণ অনেকেই টের পান না।
এস’তে স্পিচ বা কথা বলতে সমস্যা- স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির (বিশেষত যদি স্ট্রোকটি মস্তিষ্কের বাম দিকে হয়) হঠাৎই কথা বলতে কষ্ট হয়। স্ট্রোকের লক্ষণ হিসেবে এটিই সর্বপ্রথম প্রকাশ পায়।
টি’তে টাইম বা সময়- স্ট্রোকের চিকিৎসায় বেশি সময় পাওয়া যায় না। এ কারণে সময়মতো রোগী চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুবরণও করতে পারে রোগী। এ কারণেই বলা হয় ‘টাইম ইজ ব্রেইন’।
ব্রেইন স্ট্রোক একজন ব্যক্তির জীবনে হঠাৎ করেই পরিবর্তন আনে। বাড়িতে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর যত্ন নেওয়া যে কোনো পরিবারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি।
শত শত স্ট্রোকের রোগীর উপর করা গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পরিবারে একজন কর্মক্ষম ব্যক্তির স্ট্রোক হয় ও তিনি পরবর্তীতে অসাড় হয়ে পড়েন, সে পরিবার অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল হয়ে পড়ে। বিশ্বে এমন অনেক পরিবার আছে।
তবে ব্রেইন স্ট্রোক হওয়ার আগেই এর লক্ষণ দেখে দ্রুত নিউরোসায়েন্স বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে অনেক ক্ষেত্রেই তা নিরাময়যোগ্য। এ কারণেই BE FAST জানা জরুরি। এটি হলো স্ট্রোক শনাক্তের প্রাথমিক জ্ঞান।
স্ট্রোক যে কারও যে কোনো জায়গায় ঘটতে পারে। তাই এ ৬ লক্ষণগুলো জানা থাকলে আপনিও আশেপাশের অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবেন।
বিশ্বব্যাপী স্ট্রোকের প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব স্ট্রোক সংস্থা প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর ‘বিশ্ব স্ট্রোক দিবস’ পালন করে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য ’মিনিট বাঁচায় জীবন’।সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া