জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনতে কিছু আইনি জটিলতা আছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত বিএসআরএফ সংলাপে তিনি এ কথা জানান।
সংগঠনের সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের অধীনে মূল দুটি বিভাগ রয়েছে- জননিরাপত্তা বিভাগ এবং সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ। এই দুই বিভাগে ছোট-বড় মিলিয়ে বেশ কয়েকটি অনুবিভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আরেকটি বিভাগ যুক্ত হয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্যক্রম ওভাবে শুরু করতে পারিনি। এখনো পরিকল্পনা চলছে কিভাবে সুষ্ঠুভাবে এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। হয়তো আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগে যারা ভোটার তাদেরকেই কেবল এনআইডি দেওয়া হতো। আমাদের নির্বাচন কমিশন ১৮ বছরের পর থেকে এনআইডি দিতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শূন্য বয়স থেকে এনআইডি চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসার ব্যাপারে কিছু আইনি জটিলতা আছে। সেটা দেখার জন্য ফাইল আইন মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় এর আইনগত দিক যাচাই-বাছাই করে দেখছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স, সে নির্দেশনা মেনেই আমরা কাজ করছি। আধুনিক বিশ্বে যে ক্রাইম তা সাইবারে চলে গেছে, সেখানে মোকাবিলা করতেও পুলিশকে যুগোপযোগী করা হচ্ছে। আমাদের পুলিশকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। আমরা মাদক তৈরি করি না।
মাদকের সাপ্লাই কন্ট্রোল করার জন্য বিজিবিকে শক্তিশালী করছি। আমাদের সমুদ্র সীমান্তেও নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। আমাদের আনসার বাহিনীকে শক্তিশালী করছি। আমাদের সব বাহিনীকে যুগোপযোগী করে একটা পর্যায়ে যখন নিয়ে আসছি তখনই দেখি দেশে একটা সহিংসতার ঘটনা নতুন করে দেখছি। আগে জঙ্গির উত্থান দেখেছিলাম সে রকমই আরেকটা উত্থান ঘটাতে এ ধরনের প্রচেষ্টা।
‘আমরা সুরক্ষা সেবায় পাসপোর্টে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছি। আমরা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) করেছিলাম। এখন সেটা সবার হাতে। এরপর পাসপোর্টকে আরও আধুনিক করতে সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী জার্মানির একটি কোম্পানির মাধ্যমে ই-পাসপোর্টের কাজ চলছে। এশিয়ার অনেক দেশই এ উদ্যোগ নেয়নি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারাগারে আসামিদের ক্রিমিনাল ডাটাবেজ তৈরি করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স গ্রহণ করেছি। আমরা এ বিষয় কঠোর অবস্থানে রয়েছি। আমরা আগে শুনতাম আগুন নিভে গেলে নাকি ফায়ার সার্ভিস আসে। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিক করা হয়েছে। যেকোনো দুর্যোগে তারা দ্রুত সেবা দিতে পারে। কিন্তু যদিও ট্রাফিক জ্যাম একটা বাঁধা সেক্ষেত্রে বিভিন্ন এলাকায় জোন করে দেওয়া হয়েছে।
দেশের সব উপজেলায়ও ফায়ার স্টেশন করা হয়েছে এ গ্রেডের। আনসারকে আরও শক্তিশালী করা হবে যাতে তারা পুলিশের সহযোগী হিসেবে ভিআইপি নিরাপত্তা দিতে পারে। আমাদের ক্যাপাসিটি বাড়াচ্ছি। কারাগারকে সুন্দর ব্যবস্থায় নিতে যাচ্ছি।
‘কোস্টগার্ডকে আরও আধুনিক করা হচ্ছে। আরও হেভি জাহাজ ও স্পিডবোট কেনা হবে। ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আমাদের বর্ডার রোডগুলো সংস্কার হচ্ছে। ওয়াচ টাওয়ার হচ্ছে। রোহিঙ্গারা যাতে মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে না পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাবো শিগগির।’
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মন্দিরে কোরআন রাখা কোনো হিন্দুর কাজ না আমি বলেছি। আমি দায়িত্ব নিয়ে, অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেছিলাম। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে। কারণ কোনো হিন্দুর এই দুঃসাহস হবে না। যে ছেলেটি করেছে তাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
আমরা মনে করছি, কিছুদিনের মধ্যেই এর পেছনের কারণ জানতে পারবো। নোয়াখালীর ঘটনায়ও নাম জানা গেছে। এমন নামও শুনবেন যারা আপনাদেরও পরিচিত। রংপুরের ঘটনারও নাম জানা গেছে। আমরা শিগগিরই জানাবো।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১ লাখ লোক থাকছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা বাড়তে বাড়তে শেষ সীমানা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আমরা চাই রোহিঙ্গারা ভালো থাকুক এখানে। তারা (মিয়ানমার) দ্রুত তাদের দেশে ফিরে যাক। অসুবিধাটা কোথায় সেটা আপনারা জানেন। বলপূর্বক রোহিঙ্গাদের যে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো তার পেছনের কারণও আপনারা জানেন। আরসার (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) পেছনে কারা তাও আপনারা জানেন।
ক্যাম্পগুলোতে আরসার কিছু যুবক ঘোরাঘুরি করছে। রোহিঙ্গা নেতা সব সময় বলেছে আমরা ফিরে যেতে চাই। তাকে আমরা চিহ্নিত করেছি। এই যে হত্যা মারামারি, দখল, আধিপত্য বিস্তার, তার ওপরে মাদক ব্যবসা। যেটা আমি সসব সময় বলি এটা বর্ডার পার হয়ে দুর্গম এলাকায় চলে যায় আবার ফিরে আসে। এর ভাগাভাগি সব মিলিয়ে সেখানে একটা অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যার জন্য আমরা পুলিশ, র্যাব, আনসার পাঠিয়েছি। আর্মির ওয়াচে রেখেছি তাদের। তারপরেও বিশৃঙ্খলা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ভেতরে পায়ে হাঁটার রাস্তাগুলোতে সহিংসতা ঘটে। নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে। যারা খুনের ঘটনা ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা তাদের আটকের চেষ্টা করছি। এখানে নানামুখী বিষয় রয়েছে। এখানে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। যারা পাঠিয়েছে তাদেরও ইন্ধন থাকতে পারে।
এ সময় সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী আজাদ মাসুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, অর্থ সম্পাদক মো. শফিইল্লাহ সুমন, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য ইসমাইল হোসাইন রাসেল, শাহজাহান মোল্লা, হাসিফ মাহমুদ শাহ, শাহাদাত হোসেন রাকিব, বেলাল হোসেন, মো. রুবায়েত হাসান উপস্থিত ছিলেন।