মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়ার ভাগ্যকে শাপশাপান্ত করে ক্ষান্ত হয়েই গ্রামীণ নারীরা স্বামী-সন্তানের সব চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।
শুধু পরিবার নয়, বয়ে নিয়ে চলছেন এ সমাজ ও দেশকে। কিন্তু নিজের বেলায় জুটছে চরম অবমূল্যায়ন। গ্রামীণ নারীদের কাজ দৃশ্যমান হলেও কাজের মূল্য কিন্তু অদৃশ্য রয়েছে। এমনই বাস্তবতায় বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে একযোগে পালন করা হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস’।
১৯৯৫ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৪র্থ নারী সম্মেলনে ১৫ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালনের প্রস্তুাব গৃহীত হয়।
১৯৯৭ সাল থেকে জেনেভা ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা Women’s World Summit Foundation (WWSF) দিবসটি পালনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি পালন করে।
এরপর ২০০৭ সালে ১৫ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রামীণ নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গ্রামীণ উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্রতা দূরীকরণসহ নানা ক্ষেত্রে গ্রামীণ নারীদের ভূমিকার স্বীকৃতি স্বরুপ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে বিশ্বজুড়ে।
বিভিন্ন কুটিরশিল্প, ছোটখাট ব্যবসা বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত হওয়ায় আগের তুলনায় কিছুটা কমে এলেও কৃষি খাতে নারীর অংশগ্রহণ এখনো তুলনামূলক বেশি।
বীজ সংরক্ষণ থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদন, শস্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিপণন পর্যন্ত প্রতি ধাপে রয়েছে নারীর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ। বাংলাদেশ যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে এতে আমাদের গ্রামীণ নারীদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
নারীরা শুধু শস্য উৎপাদন নয়, মাছ চাষ, পশুপালন এমনকি বাজারজাতের কাজেও সমানভাবে যুক্ত। তবে কৃষিতে নারীর এমন অংশগ্রহণের নাম দেওয়া হচ্ছে ‘পারিবারিক সাহায্য’। কৃষক হিসেবে না পরিবার থেকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে, না সরকারিভাবে স্বীকৃতি মিলছে।
কৃষি থেকে আসা আয়েও নারীদের ভাগ শুন্য। তাছাড়া ভূমিতে নেই সমঅধিকার, নেই কৃষিঋণে। দৈনিক ১২-১৬ ঘণ্টা গৃহস্থালী কাজ হোক বা কৃষি-পারিবারিক শ্রম হিসেবে গণ্য করে নারীদের এসব কাজ করতে হচ্ছে অবৈতনিক।
অথচ এসব কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর মতামত প্রতিষ্ঠার সুযোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৈষম্য ও নির্যাতনের হার কমে আসার সম্ভাবনা অসীম।