
১৯৯৮ সালে ক্রীড়া ফেডারেশনসমূহের নির্বাচন প্রবর্তনে শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন। সেই থেকে বিসিবির পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনের গুরুত্ব অন্য ১০টি ফেডােশেনের চেয়ে একটু বেশিই।
তারই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে ৬ অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে সামনে রেখে। হোম অব ক্রিকেট শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রশাসনিক ভবন ছেঁয়ে গেছে প্রার্থীদের ব্যনারে-ব্যনারে। ১৭৩ জন ভোটারের মধ্যে ১২৭ জন ভোটারের জন্য মঞ্চ তৈরি।
তবে এখানেও পোস্টাল এবং ই-ভোটে আগ্রহীর সংখ্যা ৫৭ জন। অর্থাৎ সশরীরে ভোট দিবেন ৭০ জন। ১৬টি পরিচালক পদে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন তারা। এই ১৬টি পদের মধ্যে ঢাকার ক্লাব কোটার ১২ জনের প্যানেল আজ রাতে নির্ধারিত হবে। মোহামেডানের ক্রিকেট কমিটির সেক্রেটারি মাসুদুজ্জামান, না হকি কমিটির চেয়ারম্যান মনজুর আলম মুঞ্জু-তা ফয়সালা হবে।
বিসিবির নির্বাচনের শুরু থেকেই ছিল প্রভাবশালীদের দাপট, ৭ম নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম নয়। ১৯৯৮, ২০০১ এবং ২০০৫-প্রথম তিনটি নির্বাচনে সকল ভোটারের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার বিধান থাকায় ওই তিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে জেলাও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটারদের তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করায় নির্বাচনের আমেজে পড়েছে ভাটা। ক্লাব কোটার ১২ পরিচালকে ৫০ জন ক্লাব কাউন্সিলর এবং জেলা ও বিভাগীয় কোটার ১০ পরিচালক প্রার্থীকে ওই ক্যাটাগরির ৭০ কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছেন সেবার। ক্যাটাগরি থ্রি-তে ১ পরিচালক পদে সেখানে ৪৬ ভোটার দিয়েছেন ভোট।
২০১৩ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জেলাও বিভাগীয় কোটাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করে আমেজটাই শেষ করে দিয়েছে বিসিবি। স্ব বিভাগের কাউন্সিলরদের ভোটে স্ব স্ব বিভাগীয় কোটার পরিচালক নির্বাচনের রেওয়াজ সেই থেকে টানা ৩টি নির্বাচনে বহাল আছে। ২০১৭ সালের অক্টোবরের পর বিসিবির ৪ বছর মেয়াদী নির্বাচনের আবহটা পেয়েছে কাউন্সিলররা গত ২৬ আগস্ট বিসিবির বার্ষিক সাধারণ সভায়।
১ অক্টোবর বিসিবির নির্বাচনের তারিখ পরিচালনা পরিষদের সভায় হয়েছে নির্ধারিত। ২৬টি পরিচালক পদের মধ্যে সভাপতি পদে নির্বাচন হবে নির্বাচিত পরিচালকদের ভোটে। ২টি পরিচালক কোটা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জন্য বরাদ্দ। অবশিষ্ট ২৩টি পদের মধ্যে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ক্যাটাগরি ওয়ান থেকে পরিচালক পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে সেদিনই প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়ে গেছেন ৭ পরিচালক।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আকরাম খান, আ.জ.ম নাছির, শেখ সোহেল, কাজি ইনাম, আলমগীর আলো, শফিউল ইসলাম চৌধুরী নাদেল এবং অ্যাড. আনোয়ার নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়েছেন।
অবশিষ্ট ১৬ পদে প্রার্থী ছিলেন ২৫ জন। বিসিবির ২ মেয়াদে নির্বাচিত পরিচালক শওকত আজিজ রাসেল বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা পেরিয়ে ঢাকা বিভাগীয় কোটার পরিচালক পদপ্রার্থী খালিদ হোসেন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে প্রার্থীর সংখ্যা এখন ২৩ জন। ১৬টি পরিচালক পদে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন তারা।
ক্যাটাগরি-২ এ ১২ পরিচালক কোটায় ১৬ জন করবেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের ৫৬ কাউন্সিলের ভোটে নির্বাচিত হবেন ১২ পরিচালক। বিসিবির নির্বাচনে বিগত দুই মেয়াদে ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়নি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি। এই প্রথম বিসিবিতে নির্বাচন করতে হচ্ছে তাকে। ১৬ প্রার্থীর মধ্যে ৩জন ডামি প্রার্থী হিসেবে আছেন এখনো।
ক্যাটাগরি ১-এ নির্বাচন হচ্ছে ২টি বিভাগে। ঢাকা বিভাগে ২ পরিচালক কোটায় প্রার্থী ৪ জন-নাইমুর রহমান দুর্জয়, তানভীর আহমেদ টিটু, আশফাকুল ইসলাম এবং খালিদ হোসেন। রাজশাহী বিভাগে খালেদ মাসুদ পাইলটের প্রতিদ্বন্দ্বী সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী। ক্যাটাগরি-৩ এ খালেদ মাহমুদ সুজনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে শক্ত অবস্থানে আছেন নাজমুল আবেদিন ফাহিম।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনে ডাকযোগে এবং ই-মেইলে ভোট দিতে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
ভোটারদের বাসার ঠিকানায় পোস্টাল এবং ই-ভোট দিতে আগ্রহীদের আবেদন ফরম পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। পোস্টাল এবং ই- ভোট দিতে আগ্রহীরা সেই ফরম পূরণ করে গত ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে তা পাঠিয়ে দিয়েছে।
যার মধ্যে পোস্টাল ভোট দিবেন ৪৯ জন। ৮ জন দিবেন ই-ভোট।
পোস্টাল ব্যালট ইতোমধ্যে পাঠিয়ে দেয়ার কথা। তবে পোস্টাল ভোট দিতে আবেদনকারীরা ব্যালট নয়, হাতে বুঝে পেয়েছেন রিসিভার্স কপি। সেই কপিতে স্বাক্ষর করতে হয়েছে শুধু !
পোস্টাল ভোট দিতে আবেদনপ্রার্থী যারা, তাদের অধিকাংশই বিসিবির চাকুরে। অন্যরা বিসিবির কোনো না কোনো কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত সাবেক অধিনায়ক, ক্রিকেটার, কোয়াব প্রতিনিধি সহ যারা সুস্থ-সবল এবং ঢাকায় অবস্থান করছেন, তারাও পোস্টাল এবং ই-ভোটের আবেদনকারী!
ক্যাটাগরি-২ তে চূড়ান্ত ১৬ জন প্রার্থী : নাজমুল হাসান পাপন (আবাহনী লি.), গাজী গোলাম মর্তুজা (গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স), নজিব আহমেদ (শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব), মাহবুব উল আনাম, মাসুদউজ্জামান (মোহামেডান), ওবেইদ রশীদ নিযাম (শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব), সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া (ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব), মো. সালাহ্উদ্দিন চৌধুরী (কাকরাইল বয়েজ ক্লাব), ইসমাইল হায়দার মল্লিক (শেখ জামাল ক্রিকেটার্স), এনায়েত হোসেন সিরাজ (আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব), ফাহিম সিনহা (সূর্যতরুণ), ইফতেখার রহমান মিঠু (ফেয়ার ফাইটার্স), মনজুর কাদের (ঢাকা এসেটস), আব্দুর রহমান (মিরপুর বয়েজ), মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম (গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমী), মো.মনজুর আলম মনজু (আসিফ শিফা ক্রিকেট একাডেমী)।