ইংরেজী নাম সুইট পটেটো। পৃথিবীর নানান দেশে মিঠা আলু সবজী হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।
এজন্য সবজী ফসল হিসাবেই এটা পরিচিত । কিন্তু আমাদের দেশে সবজী হিসাবে এটার ব্যবহার বিরল, এখানে ইহা বিকল্প প্রধান খাদ্য হিসাবেই সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পৃথিবীতে এমন কয়েকটি এলাকা আছে যেখানে মিঠা আলুই মানুষের প্রধান খাদ্য।
উৎপাদনের দিক দিয়ে বাংলাদেশে মিঠা আলুর গুরুত্ব অপরিসীম। মিঠা আলুকে অনেকেই গরীবের খাদ্য বলে অবহেলা করে থাকেন, অথচ ফলনশীলতা ও পুষ্টিমূল্যের বিচারে এটা একটি উৎকৃষ্ট খাদ্য ফসল।
কন্দমূল ছাড়াও এটার পাতা একটি পুষ্টিকর শাক। আমাদের দেশে মিষ্টি আলু রাঙ্গা আলু নামেও পরিচিত।
বেগুনী,লাল,হালকা হলুদ অথবা সাদা রঙ্গের হয় মিষ্টি আলু। মিষ্টি আলুতে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে। দ্রুত শক্তি প্রদান করতে পারে মিষ্টি আলু।
বিটা ক্যারোটিন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ মিষ্টি আলু। এছাড়াও এতে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স,আয়রণ এবং ফসফরাসও থাকে।
তাই বলা যায় যে, মিষ্টি আলু ইমিউন সিস্টেমের জন্য উপকারী এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। বিটা ক্যরোটিন,ভিটামিন সি এবং ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতির কারণেই সম্ভবত মিষ্টি আলুর প্রদাহরোধী ভূমিকা দেখা যায়।
অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উভয় ধরনের প্রদাহ কমাতেই অত্যন্ত কার্যকরী মিষ্টি আলু। বিটা ক্যারেটিন,জিংক,ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এর উপস্থিতির কারণে মিষ্টি আলু আরথ্রাইটিস মোকাবেলায় কার্যকরী ভুমিকা রাখে। মিষ্টি আলু সিদ্ধ করা পানি অস্থিসন্ধিতে বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করলে আরথ্রাইটিসের ব্যথা কমে।
সাধারণ আলুর চেয়ে মিষ্টি আলুতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে এবং স্বাদেও ভালো। এতে ম্যাগনেসিয়াম নামক খনিজ উপদানটিও থাকে বলে মিষ্টি আলু হজম সহায়ক একটি খাবার।
এছাড়াও এত স্টার্চ থাকে যা পাকস্থলী ও অন্ত্রকে শীতল করতে পারে। মিষ্টি আলুর আঁশ শরীরে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষা করে, হাউড্রেটেড রাখে এবং কোষের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। পাকস্থলী ও অন্ত্রে শীতলিকারক প্রভাব ফেলতে পারে মিষ্টি আলু।
ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স,ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন,পটাসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম পাকস্থলীর আলসার নিরাময়ে সাহায্য করে। মিষ্টি আলুর আঁশ কোষ্টকাঠিন্য এবং এসিড তৈরি হওয়ার সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। মিষ্টি আলুর প্রদাহরোধী এবং শীতলিকারক উপাদান পাকস্থলীর আলসারের ব্যথা ও প্রদাহ কমতে সাহায্য করে।
মিষ্টি আলু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপকারী,ইনসুলিনের নিঃসরণ ঠিকমত হতে সাহায্য করার মাধ্যমে রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরি ভূমিকা রাখে। এর অর্থ এই নয় যে, ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা ইচ্ছেমত খেতে পারেন মিষ্টি আলু। ভাত অথবা অন্য শর্করা জাতীয় খাবারের পরিবর্তে মিষ্টি আলু খেতে পারেন।
মিষ্টি আলুতে জটিল স্টার্চ, ভিটামিন, খনিজ এবং কিছু আমিষও থাকে। মিষ্টি আলু খুব সহজেই হজম হয়ে যায় এবং প্রচুর শক্তি প্রদান করতে পারে। যারা ওজন বৃদ্ধি করতে চান তারা নিশ্চিন্তে মিষ্টি আলু খেতে পারেন। কারণ এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিযা নেই। ফুসফুস, শ্বাসনালী এবং নাকের জমাটবদ্ধতা নিরাময়ে সাহায্য করে মিষ্টি আলু । ফলে অ্যাজমার উপশম হয়।
ভিটামিন সি, আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ব্রংকাইটিস নিরাময়ে সাহায্য করে। মিষ্টি আলু শরীরকে উষ্ণ হতে সাহায্য করে। সম্ভবত এর মিষ্টত্ব এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শরীরের তাপমাত্রার উপর প্রভাব ফেলে।
মিষ্টি আলুর খোসার রঙ্গের জন্য দায়ী বিটা ক্যারোটিন একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিকারসিনোজেনিক উপাদান। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার নিরাময়ে বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি অত্যন্ত কার্যকরী যা মিষ্টি আলুতে থাকে।