করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় এক বছর অপেক্ষায় থাকার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিল ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমান উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এই ভর্তিযুদ্ধ শুরু হয়।
৬০ নম্বরের বহুনির্বাচনী, ৪০ নম্বরের লিখিতসহ মোট ১০০ নম্বরের এই পরীক্ষা শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়।
মহামারী পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের কষ্ট কমাতে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের আট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেন্দ্র করে এ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, রাজশাহী বিভাগের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, খুলনা বিভাগের শিক্ষার্থীরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে, সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, রংপুর বিভাগের শিক্ষার্থীরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে, বরিশাল বিভাগের শিক্ষার্থীরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ময়মনসিংহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছেন।
ক’ ইউনিটের এক হাজার ৮১৫টি আসনের বিপরীতে এবার ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছিলেন এক লাখ ১৭ হাজার ৯৫৭ জন শিক্ষার্থী। এই হিসাবে ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রতি আসনের জন্য প্রার্থী গড়ে ৬৫ জন।
পরীক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বলা হয়েছিল, তাই সকাল থেকেই ভর্তিচ্ছুদের পদাচারণায় মুখর হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসেছিলেন তাদের অভিভাবকরাও। প্রবেশদ্বারের বাইরেই অপেক্ষা করেন তারা।
সকালে ক্যাম্পাসের গাছতলা বা রাস্তার আশপাশে বসে শেষ মুহূর্তে পাঠ্যবইয়ে চোখ বুলিয়ে নিতে দেখা যায় পরীক্ষার্থীদের। পরীক্ষা নিয়ে একদিকে ভয়-উৎকণ্ঠা, অপরদিকে উচ্ছ্বাসের ছাপ ছিল তাদের মাঝে।
পরীক্ষা শুরুর আগে কথা হয় রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা ফারহান শিহাবের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “অনেক দিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে আজ সেই ভর্তি পরীক্ষা। প্রস্তুতি ভালোই নিয়েছি। তবে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে একটু ভয় তো থাকেই। দেড় ঘণ্টার পরীক্ষা নির্ধারণ করে দেবে উচ্চ শিক্ষার ঠিকানা।”
রাজধানীর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা ফাহিম রহমান বলেন, “অ্যাডমিশন টেস্ট নিয়ে অনেকদিন ধরে মাথাটা ভারি হয়ে আছে। এইচএসসি পরীক্ষা না দিতে পারলেও ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়তে হয়েছে প্রচুর।”
তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার টঙ্গী শাখা থেকে পাস করা আব্দুল্লাহ তানিম বলেন, “রাস্তার দূরত্ব একটু বেশি, তাই সকাল সকাল চলে এসেছি। ভালো লাগছে ক্যাম্পাসটা। তবে অ্যাডমিশন টেস্ট নিয়ে একটু নার্ভাস ফিল করছি।”
সব বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা হলেও ফরম পূরণের সময় ঢাকাকে কেন্দ্র হিসেবে দেওয়া অনেকে অন্য বিভাগ থেকেও পরীক্ষা দিতে এসেছেন।
কুমিল্লার জুরানপুর আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে পাস করা মেহের নিগার বিথী জানান, ভর্তি পরীক্ষার জন্য একদিন আগেই ঢাকায় চলে এসেছেন।
“বাবাকে নিয়ে গতকালই ঢাকায় চলে এসেছি, যাতে যথাসময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারি। করোনার কারণে অ্যাডমিশন কোচিং করতে পারিনি। নিজের মতো করে বাসায় বসে প্রস্তুতি নিয়েছি।”বিথীর বাবা মো. গিয়াসউদ্দিন বলেন, “কলেজ, কোচিং বন্ধ থাকায় ওভাবে পড়ালেখা করা সুযোগ হয়নি। চেষ্টা করেছি, যতটুকু সম্ভব অ্যাডমিশন টেস্টের জন্য মেয়েকে প্রস্তুত করে তোলার। আশা করি, মেয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে।”
২০২০ সালের এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও মহামারীকালে সেই পরীক্ষা কয়েক দফা পেছানো হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় পরীক্ষাও আর হয়নি। শিক্ষার্থীদের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফল গড় করে এইচএসসির মূল্যায়ন ফল প্রকাশ করা হয় এ বছর জানুয়ারিতে।
সব ঠিক থাকলে ২০২০ সালের অক্টোবর-নভেম্বরেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা হয়ে যেত। কিন্তু মহামারীর কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে এক বছর অপেক্ষার পর, ২০২১ সালের অক্টোবরে।
২ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিট, ২২ অক্টোবর ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিট এবং ২৩ অক্টোবর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগ পরিবর্তনের সমন্বিত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হবে।
সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যারয়ের পাঁচটি ইউনিটের সাত হাজার ১৪৮টি আসনের বিপরীতে মোট তিন লাখ ২৪ হাজার ৩৪০ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন এবার।
‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে ইউনিটের সমন্বয়ক ও জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মিহিরলাল সাহা বলেন, মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রথমবারের মতো সারাদেশে বিভাগীয় শহরে কেন্দ্র করে পরীক্ষা নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
“তাই সব ধরনের বিষয় মাথায় রেখেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। গতকালই আমাদের শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র নিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছেন। বিভাগীয় শহরের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের সহযোগিতা করছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা বলেন।
তিনি বলেন, কোথাও কোনো প্রশ্ন ফাঁস কিংবা জালিয়াতির সুযোগ নেই। যারা এর আগে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছে, তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে বহিষ্কার করা হয়েছে। দুদিন আগেও দুজনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
“বিভাগীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে একই প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে। পরীক্ষাগুলোতেও কোনো ধরনের সমন্বয়হীনতা থাকবে না। এক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখেছি।
সব জায়গায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ আমাদের সব ধরনের নিরাপত্তার বিষয়ে সহায়তা করছেন।”
সূত্র: বিডিনিউজ