চরম বিপদে যখন কেউ সাহায্যকারী থাকে না তখনও আল্লাহ বান্দাকে সাহায্য করেন। রিজিক দেন। আলো-বাতাস কোনো কিছু থেকেই বঞ্চিত করেন না।
এমনকি আল্লাহ তাআলা ৩ আমলে উম্মতে মুহাম্মাদিকে দুর্দিনে সাহায্য করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। সেই ৩ আমল কী?
হজরত মুসআব ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর বাবা থেকে বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের মধ্যে যারা তাঁর চেয়ে নিম্নশ্রেণির, তাঁদের উপর তাঁর মর্যাদা রয়েছে। আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা এ উম্মতকে সাহায্য করেন তার দুর্বলদের দ্বারা- তাদের দোয়া, নামাজ এবং ইখলাসের কারণে।’ (নাসাঈ)
এ হাদিসের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কী? এখানে দুর্বল দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? আবার দুর্দিনে চরম অসহায় অবস্থায় আল্লাহ তাদের ৩টি আমলে বিনিময়ে কেন সাহায্য করেন?
দুর্বল কারা?
দুর্বল হলো তারা- যারা সমাজে দারিদ্র্য, শারীরিক অক্ষমতা ও বার্ধক্যের কারণে অসহায়। তবে এসব ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই আল্লাহর আনুগত্য, ইবাদত ও স্মরণে এগিয়ে থাকে। তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ اصۡبِرۡ نَفۡسَکَ مَعَ الَّذِیۡنَ یَوَ اتَّبَعَ هَوٰىهُ وَ کَانَ اَمۡرُهٗ فُرُطًادۡعُوۡنَ رَبَّهُمۡ بِالۡغَدٰوۃِ وَ الۡعَشِیِّ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡهَهٗ وَ لَا تَعۡدُ عَیۡنٰکَ عَنۡهُمۡ ۚ تُرِیۡدُ زِیۡنَۃَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ لَا تُطِعۡ مَنۡ اَغۡفَلۡنَا قَلۡبَهٗ عَنۡ ذِکۡرِنَا
‘আর তুমি নিজকে ধৈর্যশীল রাখ তাদের সঙ্গে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকে, তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে। তোমার দুই চোখ যেন তাদের থেকে ঘুরে না যায়। আর ওই ব্যক্তির আনুগত্য করো না, যার অন্তরকে আমি আমার জিকির থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে এবং যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ২৮)
অসহায় দুর্বলরাই সমাজের জন্য আশীর্বাদ। কারণ আল্লাহ তাআলা এসব দুর্বল অসহায় মানুষের জন্যই অন্যদের সাহায্য ও জীবিকা দান করেন। হাদিসে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের দুর্বলদের জন্যই সাহায্যপ্রাপ্ত হও এবং জীবিকা পেয়ে থাকো।’(বুখারি)
সুতরাং চরম বিপদে বা দুর্দিনে আল্লাহ সাহায্য পেতে বিশেষভাবে তিনটি আমল করা জরুরি। আমল ৩টি হলো-
১. দোয়া করা
আল্লাহর কাছে দোয়া করা। এটি আল্লাহর নির্দেশ ও মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তিনি মুমিন বান্দাকে সাহায্য করেন এবং চরম বিপদ থেকে মুক্তি দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
اَمَّنۡ یُّجِیۡبُ الۡمُضۡطَرَّ اِذَا دَعَاهُ وَ یَکۡشِفُ السُّوۡٓءَ وَ یَجۡعَلُکُمۡ خُلَفَآءَ الۡاَرۡضِ ؕ ءَ اِلٰهٌ مَّعَ اللّٰهِ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَذَکَّرُوۡنَ
‘বরং তিনি; যিনি নিরুপায়ের আহবানে সাড়া দেন এবং বিপদ দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে জমিনের প্রতিনিধি বানান। আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোনো ইলাহ আছে ? তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাক।’ (সুরা নামল : আয়াত ৬২)
হাদিসেও দোয়ার কথা এসেছে- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ভাগ্য পরিবর্তন হয় শুধু দোয়ার মাধ্যমে এবং আয়ু বাড়ে শুধু ভালো কাজের মাধ্যমে।’ (তিরমিজি)
২. নামাজ পড়া
আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার অন্যতম মাধ্যমও নামাজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো বিপদে পড়লেই নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। কোরআনুল কারিমের ঘোষণাও এমনই-
وَ اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَ الصَّلٰوۃِ ؕ وَ اِنَّهَا لَکَبِیۡرَۃٌ اِلَّا عَلَی الۡخٰشِعِیۡنَ
‘আর তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে (আল্লাহর কাছে) সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই তা (ধৈর্য ও নামাজ) বিনয়ী ছাড়া অন্যদের উপর কঠিন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৫)
৩. ইখলাস বা একনিষ্ঠতা
চরম বিপদের মুহূর্তগুলোতে দোয়া ও ইবাদতে ইখলাসের সঙ্গে অতিবাহিত করা জরুরি। ইখলাস বা একনিষ্ঠতাই বিপদে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার আরেকটি মাধ্যম। ইখলাসের আমলেই দ্রুত বিপদ কেটে যায়। পক্ষান্তরে যারা লোক দেখানো প্রচেষ্টায় দোয়া ও নামাজে নিয়োজিত হয়; তাদের বিপদ আরও বেড়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ خَرَجُوۡا مِنۡ دِیَارِهِمۡ بَطَرًا وَّ رِئَآءَ النَّاسِ وَ یَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا یَعۡمَلُوۡنَ مُحِیۡطٌ
‘আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের ঘর থেকে অহংকার ও লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বের হয়েছে এবং আল্লাহর রাস্তায় বাধা প্রদান করে, আর তারা যা করে, আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে আছেন।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ৪৭)
মনে রাখা জরুরি
দোয়া, নামাজ ও ইখলাস একটি অপরটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। একটি ছাড়া অন্যটির সুফল পাওয়া যাবে না। তাই ইখলাসের সঙ্গে আল্লাহর কাছে দোয়া ও নামাজে সাহায্য প্রার্থনার কথা বলেছেন বিশ্বনবি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে চরম বিপদে দুর্দিনে দোয়া, নামাজ ও ইখলাসের সঙ্গে সাহায্য প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। লোক দেখানো দোয়া ও নামাজ থেকে হেফাজত করুন। দুর্দিনে আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হৃদয়ে সাহায্য প্রার্থনার তাওফিক দান করুন। আমিন।